সুজন চৌধুরী : চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেছেন, চাঁদপুরের জন্য গর্বের তিনটি বিষয়। পদ্মা-মেঘনা নদী, ইলিশ ও পর্যটন। ইলিশের প্রজনন রক্ষা না হলে চাঁদপুরে ইলিশ নিয়ে গর্বের বিষয়টি থাকবে না।
এবছর আপনাদের (জেলেদের) একাধিকবার সচেতন করেছি এবং একই সাথে ইলিশ না ধরার জন্য অনুরোধ করেছি। আশা করি আপনারা ইলিশ ধরার জন্য নদীতে নামবেন না। যদি কেউ আইন অমান্য করেন তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ইলিশ মাছকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আগামীতে ইলিশের প্রজনন বাড়াতে হলে আমাদের যা যা করণীয় তাই করতে হবে। শুধুমাত্র পুলিশ প্রশাসনের একার পক্ষেই ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকাবাসীসহ দলীয় নেতৃবৃন্দদেরকেও এই সহযোগিতায় আসতে হবে। তাহলে আমরা একটি সফলতা অর্জন করতে পারব। শুধুমাত্র ইলিশের বাড়ি বললেই হবে না, এখানে ইলিশের অভয়াশ্রম তৈরি করতে হবে। যাতে মা ইলিশ নির্ভয়ে ডিম ছাড়তে পারে। ইলিশের পাশাপাশি আমাদের নদীর দিকেও নজর দিতে হবে। নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, যে নদীটাকে কেন্দ্র করে এ জেলায় প্রায় এক লক্ষ লোক জীবিকা নির্বাহ করে, সেই নদী দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর যে নদীতে সাগর থেকে ইলিশ মাছ আসে, সেটা অনেক দামি একটা মাছ। সে ইলিশ মাছ আজ নানান কারণে কমে যাচ্ছে। ইলিশ মাছ আসছে না এই সমস্ত কারণে। এই নদী যদি না বাঁচে তাহলে আমাদের জেলেরা বাঁচবে না। এই নদী যদি না বাঁচে ইলিশ আর আসবে না। একটার সাথে আরেকটা ওৎপ্রতভাবে জড়িত। নদী ইলিশ মূল হেড পর্যটন তিনটাই একটার সাথে আরেকটার সম্পর্ক রয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, যারা এই জেলার বড় বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তারা এই তিনটা সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে রকম দায়িত্ব নেয়ার কথা তাঁর সেরকম দৃশ্যমান আমারা কিছু দেখছি না। নদীতে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের কারণে ড্রেজারের শব্দের কম্পনিতে ইলিশ মাছের প্রজনন ক্ষমতায় বাঁধা সৃষ্টি করে। অচিরেই আমাদেরকে এই নদীতে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার বন্ধ করতে হবে। তাহলে ইলিশের প্রজনন ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে ও সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম.এন জামিউল হিকমা এবং কোস্ট কার্ড চাঁদপুর স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শওকত আহমেদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার মানিক, সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত।
জেলা প্রশাসক জেলেদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ২৫ কেজি চাল দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনদেরকে অনুরোধ করবো যাতে করে প্রতিটি সংগঠন জেলেদেরকে চালের পাশাপাশি নগদ টাকা দিয়ে সহায়তা প্রদান করে। এবার জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক টহলরত অবস্থায় থাকবে। যে সমস্ত বাড়িতে ইলিশ মাছ বিক্রি করার সন্ধান পাওয়া যাবে ঐ সমস্ত বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং তার নামে দুটি মামলা দায়ের করা হবে। ইলিশ মাছকে রক্ষা করতে না পারলে চাঁদপুরের গর্ব নষ্ট হয়ে যাবে। জেলা প্রশাসক ইলিশ রক্ষার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন।
আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এর নেতৃত্বে দুপুর ১টার দিকে জেলা টাস্কফোর্সের অংশীজন, মৎস্যজীবী নেতা, জেলেসহ বিভিন্ন পেশা শ্রেণির লোকজনের অংশগ্রহনে মেঘনা নদীর মোহনায় সচেতনতামূলক র্যালী বের হয়।