
স্টাফ রিপোর্টার :
আজ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনীর বলয় থেকে মুক্তি পেয়েছিল। চাঁদপুর থানার সম্মুখে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা করতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা বা চাঁদপুরবাসী।
দিবসটি উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে। সকাল ১০টায় বীর শহীদদের স্মরণে চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কে রেলওয়ে লেকে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকারে’ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হিসাবে বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো হবে এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হবে। এ সময় কর্মসূচীতে জেলার সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে যথা সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন।
১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিং এর মাধ্যমে প্রথম আক্রমনের সূচনা করে। প্রথম দিনের হামলায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারের একজন নারী পথচারী নিহত হন। শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে। এ স্কুলের মাঠে প্রথম অপারেশন হিসেবে এক বৃদ্ধকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। চাঁদপুর বড়ষ্টেশন মোলহেড এলাকায় হানাদার বাহিনীরা মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের হত্যা করে মেঘনা নদীতে ফেলে দিতো। পাক সেনারা মেঘনা, পদ্মা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় রেলওয়ে স্টেশনের অগ্রভাগে দু’টি টর্সার সেল এবং আক্কাছ আলী স্কুল, পুরান বাজার শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়, টেকনিক্যাল স্কুল ইত্যাদি স্থানে ৮টি টর্সার সেল স্থাপন করে। দীর্ঘ ৯ মাস এই টর্সার সেলগুলোতে কত নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে, নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তার হয়তো সঠিক তথ্য কেউ না জানলেও পাশেই বহমান পদ্মা, মেঘনা নদী এর নীরব স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ এই সময় যত লোককে হত্যা করা হয়েছে, তার প্রায় বেশীরভাগ লাশগুলো হাত পা বেঁধে পাথর দিয়ে পদ্মা মেঘনায় ডুবিয়ে দেয়া হতো।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিসেনা কর্তৃক হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভারতের মাউন্ট্নে ব্রিগেডও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমন চালায়। দিশে না পেয়ে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান চাঁদপুর থেকে পলায়ন করেন। ৩৬ ঘন্টা তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ডিসেম্বর জেলার হাজীগঞ্জ এবং বিনা প্রতিরোধেই চাঁদপুর শহর মুক্ত হয়
দীর্ঘ আট মাসের মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে বড় স্টেশনের বদ্ধভূমিতে নির্মাণ করা হয় ‘রক্তধারা’। এর আগে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কালাম, খালেক, সুশীল ও শংকরের নামে স্থানীয় ট্রাক রোডে নির্মাণ করা হয় ‘মুক্তিসৌধ’। চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র লেকের উপর ভাসমান স্মৃতিসৌধ ‘অঙ্গীকার’ নির্মাণ করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন