শামসুজ্জামান ডলার, মতলব উত্তর ঃ মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার মধ্যখান দিয়ে প্রবাহিত ধনাগোদা নদীর ৩০ কিলোমিটার অঞ্চল কচুরিপানার দখলে। বর্ষার ৪ মাস ব্যতীত বছরের বাকী ৮ মাসই থাকে নদীতে কচুরিপানার স্তুপ। উপজেলার বেলতলী থেকে কালিরবাজার হয়ে শ্রী রায়েরচর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কচুরিপানার স্তুপ এতটাই ঘন যে, নদীর বুকে এখন নৌ যান নয়, বরং এ যেনো শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলায় মাঠ। ছেলেরা সেখানে ফুটবল খেলায় মেতে থাকে।
ধনাগোদা নদীর শ্রী রায়েরচর ব্রিজের নিচে কচুরিপানায় জমাট বাঁধা স্থানে স্থানীয় যুবকরা ফুটবল খেলছে এমন দৃশ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মতলব ধনাগোদার নৌকাঘাট, সাহেববাজার, টরকি, নন্দলালপুর, দুর্গাপুর, শ্রীরায়েরচর, বাংলাবাজার, রায়েরকান্দি, মাছুয়াখাল, শাহপুর, নায়েরগাঁও, খেয়াঘাট পর্যন্ত পুরো নদীজুড়ে কচুরিপানা জমে আছে। এরই মাঝখানে বেশ ক’টি বালুবাহী বাল্কহেড গত কয়েকদিন ধরে কচুরিপানার মধ্যে আটকে আছে। বাল্কহেডের ষ্টাফদের সাথে কথাহলে তারা জানায়, তারা না বুঝে এখান দিয়ে ঢুকে পড়েছে, কয়েকদিন ধরে আটকা আছে এবং নদীর এই পরিস্থিতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।
জানা গেছে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ধনাগোদা নদীর এমন বেহাল দশার কারণে এই পথ ব্যবহারকারীদের এখন বেশি ভাড়া গুণে স্থলপথই ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে বেশি বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। নৌযান না চলার কারণে ব্যবসায়ীরা স্থলপথে দ্বিগুণ ভাড়ার টাকা গুনতে হয়। মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলাকে বিভক্ত করে রাখা এই নদী দুই উপজেলার মানুষের একমাত্র নৌ-চলাচলের পথ। এই নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় গড়ে উঠেছিল
ধনাগোদা নদীর দু’পাশে ছোট-বড় ১৫ টির মতো হাট-বাজার। ঢাকা নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে নদীপথে একমাত্র যোগাযোগ ছিল এই ধনাগোদা নদী। মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যেত ছোট-বড় লঞ্চগুলো। সেই লঞ্চঘাটকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় হাট-বাজার। নদীর নাব্য সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় এসব বাজারে এখন শুধু সুনসান নীরবতা। বন্ধ হয়ে গেছে হাজারো মানুষের কর্মের চাকা।
স্থানীয় কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথাহলে তারা দাবী জানায়, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ ঝাক (মাছ ধরার ফাঁদ) স্থাপন ও মতলব শ্রী রায়েরচর ব্রিজের অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে জোয়ার-ভাটার সময় কচুরিপানা সরতে না পেরে জমে নদীকে প্রায় জলাভূমিতে পরিণত করেছে।
স্থানীয়রা নদীটির খনন ও কচুরিপানা অপসারণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করতে হলে ধনাগোদা নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে।
ধনাগোদা নদী সংলগ্ন শাহাপুর বাজারের ব্যবসায়ী ওমর আলী জানান, দীর্ঘ আট মাস কচুরিপানা স্তপে লাঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা দোকানপাট ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। বাজারে লোকজন নেই। শুধু দোকান পাহারা দিচ্ছেন কেউ কেউ।
লঞ্চ যোগাযোগের মাধ্যমে একসময় স্থানীয় অনেক শিক্ষার্থী উপজেলা সদরের কলেজ ও স্কুলগুলোতে লেখাপড়া করতে যেতো। এ নদীতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। নৌ যোগাযোগের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী এখন (মানসম্মত না হলেও) স্থানীয় স্কুল-কলেজগুলোতেই ভর্তি হচ্ছে।
মতলব উত্তর উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুব আলম লাভলু জানান, নাব্য সংকটের কারণে জলজ প্রাণীর ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গ্রীষ্মকালে খালবিল শুকিয়ে সেচের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বোরো ধান ও রোপা আমনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কচুরিপানা অপসারণ, অবৈধ ঝাক উচ্ছেদ সহ আর কি কি প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।