প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৮, ২০২৫, ৩:৫৩ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২, ২০২৫, ১০:৩৪ এ.এম
হাইমচর উপজেলার মসজিদের ছাদে পাওয়া নিহত দুলালের পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

জাহিদুল ইসলাম, হাইমচর অফিস : হাইমচরে এক ইজি বাইক (অটো) চালকের অর্ধ-গলিত মরদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ও গভীর রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। চার দিন ধরে নিখোঁজ থাকা হোসেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (দুলাল) মেলকারের (৪০) দেহটি বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে হাইমচর উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ছাদ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
তবে, এ ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা মানতে নারাজ নিহত দুলালের পরিবার। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় হাইমচর প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দুলালের স্ত্রী তামান্না বেগম এটিকে 'পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড' হিসেবে দাবি করে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছেন।
নিহত দুলালের স্ত্রী তামান্না বেগম জানান, গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) ফজরের নামাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর দুলাল আর ফেরেননি। তিনি জানান প্রতিদিনের মতো নামাজ শেষে সকাল সাড়ে ৬টায় না ফেরায় স্বামীর মোবাইলে ফোন দেন স্ত্রী। দুপুর ১টা পর্যন্ত ফোনটি বাজতে থাকলেও কেউ ধরেনি। এরপরই ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিং করে অবস্থান হাইমচরের মধ্যে জানতে পারে। কিন্তু নিখোঁজ ডায়েরির কপি পরিবারের কাছে দেওয়া হয়নি। চার দিন পর, বৃহস্পতিবার দুপুরে মসজিদের ছাদ থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা দুলালের অর্ধ-গলিত মরদেহ দেখতে পায়।
তামান্না বেগম সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, স্বামীর মরদেহ উদ্ধারের ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটি নিছক মৃত্যু নয়, বরং একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তামান্না বেগমের দাবি "আমার স্বামীর পূর্বে কারো সাথে কোনো শত্রুতা ছিল না। তবে পারিবারিকভাবে বাবা এবং ছোট ভাইয়ের সাথে সম্পত্তি নিয়ে সামান্য ঝামেলা ছিল, যা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়েছিল। এখন আমি মনে করছি, এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়।"
পরিবার হত্যাকাণ্ডের সূত্র উদঘাটনের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উপজেলা পরিষদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার বিষয়ে। এ প্রসঙ্গে তামান্না বেগম জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ফুটেজ দেখতে গেলে তিনি নিখোঁজ ডায়েরির কপি জমা দিতে বলেন। থানায় ওসি'র কাছে ডায়েরির কপি চাইলে তিনি তা দেননি। উল্টো ওসি মন্তব্য করেন— "তুমি ভিডিও দেখে কি করবা। মসজিদে একসাথে একাধিক লোকই ঢুকতে পারে তুমি কাকে সন্দেহ করবা তখন।" ডায়েরির কপি না পাওয়ায় পরিবার আর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে পারেনি। প্রশাসনের এমন ভূমিকা তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।
এদিকে হাইমচর থানা পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে অসুস্থতাজনিত মৃত্যু বলে ধারণা করছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাঁদপুর সদর সার্কেল) ও হাইমচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, দুলাল কিডনিসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। পরিবার জিডি না করলেও, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি) দায়ের করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিহত দুলালের স্ত্রী ও ছেলে সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন— নিরপেক্ষভাবে পুরো ঘটনার তদন্ত করা হোক এবং যদি এটি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তবে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
প্রতিষ্ঠাতা: ইকরাম চৌধুরী<br>
প্রধান সম্পাদক : মুনির চৌধুরী<br>
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : শরীফ চৌধুরী <br>
Copyright © 2025 Chandpurdarpan | দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ . All rights reserved.